তানভীর হোসেন তোহা’র কবিতা : রক্তকরবী

ফাগুনের স্তিমিত স্পর্শে শিউরে ওঠা রক্তকরবী,
অবিনীত শৈশবের ব্যর্থ বাচনভঙ্গি তুমি কি শুনতে পাও?
তুমি কি প্রত্যক্ষ করো, কি দুঃসহ ভাষাহীনতার অনুভুতি?
হয়তোবা তুমি দেখতে পাও,বলতে চাও,
কিন্তু তুমিও আমাদেরই মতোন, বাকশক্তিহীন!
ভাষার জন্য আন্দোলন করা একটি জাতি,
আজ অর্জিত ভাষায় মুক্তির সংগ্রামে পরাস্ত!
রক্তকরবী, তুমি কি জানো,
আজ তোমার ভাষায় কাব্য রচিত হয় না,
রচিত হয়না কোন “কান্ডারী হুশিয়ার”,
আঞ্চলিকতায় ভাড়ামো করে বলা হয়,
“নজরুল?” সে শতকে একবারই আসে!
ওর মতোন হওয়া আমার সাধ্যি নয়!
তোমার ভাষার রক্ত জমাট ধুলো ধূসরিকায়,
মাংস বিক্রেতার বাজার বসে,
মেলা হয় সাহিত্য কসাইদের!
রক্তকরবী, তুমি কি দেখতে পাও?
চাপাতির আঘাতে বায়ান্নর বর্ণমালার খণ্ডবিখণ্ড অবয়ব?
সাহিত্য সত্তার নির্মম ব্যবচ্ছেদ,
তুমি কি শুনতে পাও,
সুকান্তের ন্যায় মরণব্যাধিতে ভোগা বর্ণমালার প্রাণের আকুতি?
রক্তকরবী, একেই কি বলে স্বাধীনতা?
যেখানে তোমার ভাষায় গণতন্ত্রের স্লোগান আজ নিষিদ্ধ!
স্বাধীনতা কি শুধুই একটি নদীমাতৃক ভূখন্ড মাত্র?
পেট পুড়ে খাওয়া, আর রাত হলে কাত!
এইকি ছিল স্বাধীন বাংলার সার্বভৌমত্বের প্রতীক?
রক্তকরবী, তুমি ব্লাকবোর্ড নিশ্চয়ই চেনো,
চকের খোচায় লেখা হয় গনিতের ফর্মুলা,
আবার ইচ্ছে হলে মুছেও ফেলা যায় যখন তখন,
তোমার ভাষায় লিপিবদ্ধ সংবিধান কি আজ ভিন্ন কিছু?
ভাষা কি শুধুই নান্দনিকতা, বিদ্রোহ নয়?
রেসকোর্সের সেই বিপ্লব কি মিথ্যে?
বজ্রকন্ঠে বারুদের ন্যায় জ্বলতে থাকা কণ্ঠধ্বনি কি শুধুই একটি বক্তৃতা মাত্র?
রক্তকরবী, তুমি কি জানো কবে শেষ হবে এই মূকাভিনয়?
কবে আবার মুখ তুলে বলতে পারবো,
“স্বৈরাচার নিপাত যাক,
গণতন্ত্র মুক্তি পাক”?
কবে আবার প্রাণ খুলে গাইতে পারবো গান,
“মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি,
মোরা একটি ফুলের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি!”
রক্তকরবী,তু মিই সেই ফুল, তুমিই সেই মাতৃকা,
যার জন্য ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কাব্যের বারুদ জমাই আজও
যেনো কোন একদিন বজ্রকন্ঠে বলতে পারি,
“আমরা তোমার শান্তিপ্রিয় শান্ত ছেলে,
তবে শত্রু এলে, অস্ত্র হাতে ধরতে জানি,
আমরা প্রতিবাদ করতে জানি!”