কিছু চাইতেও পারছি না, কিছু বলতেও পারছি না

পুরো বিশ্ব এখন এক অদেখা শক্তির সাথে যুদ্ধে ব্যস্ত। যুদ্ধে পৃথিবীর কারো কাছেই নেই কোন অস্ত্র। এখন প্রতিরক্ষা ছাড়া কোন উপায় নেই। আসলে এটাকে যুদ্ধ বলে কিনা আমার জানা নেই। করোনার এই থাবায় বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে পৃথিবীর পরাশক্তি দেশ গুলো।
করোনার এই বিপর্যয়ে পৃথিবীর অধিকাংশ দেশেই চলছে লকডাউন। করোনার থাকা থেকে বাদ যায়নি আমাদের প্রিয় ভূমি বাংলাদেশও। এখানেও লকডাউন চলছে বেশ কিছু জেলাতে। এছাড়াও বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে সরকারি-বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, বেসরকারী প্রতিষ্ঠান এবং নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য ব্যতীত সমস্ত ব্যবসা প্রতিষ্ঠান।
চিকিৎসক ও গবেষকদের মতে, করোনার ৬টি স্তর রয়েছে। আর বাংলাদেশে এখন চতুর্থ স্তরে অবস্থান করছে। মানে সামাজিকভাবেই এখন দেশে ছড়িয়ে পড়েছে করোনাভাইরাস নামক অদেখা শত্রু। এ অবস্থায় বিপাকে পড়েছে দেশের মধ্যবিত্ত, নিম্ন মধ্যবিত্ত এবং দিন এনে দিন খাওয়া মানুষগুলো। একদিকে যেমন তাদের আক্রান্তের ভয়, অন্যদিকে খাদ্য সংকট।
দেশের এই পরিস্থিতিতে সরকার থেকে সাহায্য করা হচ্ছে, পাশাপাশি বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলোও সাহায্য করছে, তবে তা বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের। এই সাহায্য থেকে বঞ্চিত হচ্ছে মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত মানুষগুলো। কারন আমাদের দেশে ত্রাণ বিতরণ করা হয় লাইনে দাঁড় করিয়ে। কিন্তু মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তরা নিজেদের সম্মানের দিকে তাকিয়ে লাইনে দাঁড়াতে পারে না। আমি এখানে দিন এনে দিন খাওয়া মানুষদের ছোট করছি না। শুধু একটা অবস্থান বোঝাচ্ছি।
একটি জরিপের তথ্য অনুযায়ী, দেশে দিন এনে দিন খায় এমন মানুষের সংখ্যা রয়েছে প্রায় ছয় কোটি। আর ২০১৯ সালের জুলাইয়ে দৈনিক যায়যায়দিন পত্রিকার অনলাইন সংস্করণে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী দেশে মধ্যবিত্তের সংখ্যা প্রায় চার কোটি।
বিআইডিএসের গবেষণায় বলা হয়েছে- বাংলাদেশে যত মধ্যবিত্ত রয়েছে, এর ৪৮ দশমিক ৪ শতাংশ বা প্রায় অর্ধেকই বেসরকারি চাকরি করে। আর ২০ শতাংশের বেশি সরকারি চাকরি করে। মধ্যবিত্তদের ২২ শতাংশ ব্যবসা করে। নিম্ন মধ্যবিত্তের মধ্যে ৫১ দশমিক ৬ শতাংশ বেসরকারি চাকরি করে। আর ব্যবসায় সম্পৃক্ত মাত্র ১৭ শতাংশ। এক সময় ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করা শুধু উচ্চবিত্তের মধ্যেই সীমাবদ্ধ ছিল। কিন্তু মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তানরাও এখন ইংরেজি মাধ্যমে পড়াশোনা করে।
দেশের মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্তদের প্রায় ৭০ শতাংশই বেসরকারি চাকরি আর ব্যবসা করে। আর এই পরিস্থিতিতে সরকারী-বেসরকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এবং ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ তাই তাদের আয় রোজগারও বন্ধ। একদিকে যেমন তাদের আয় রোজগার বন্ধ, অন্যদিকে সমাজে নিজেদের অবস্থানের জন্য লাইনেও দাঁড়াতে পারছে না। এ অবস্থায় তাদের জীবন পরিচালনা দুরূহ হয়ে পড়ছে।
চ্যানেল আই তে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে এর করুণ চিত্র দেখা গেছে, বাসাবোতে অবস্থান করা এক সৌদি প্রবাসীর স্ত্রী কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, তার স্বামী সৌদিতে ২৪ ঘন্টাই লকডাউনের মধ্যে অবস্থান করছেন। তাই আয়-রোজগারও বন্ধ। এ অবস্থায় খুব কষ্টে দিনাতিপাত করছে তারা। না পারছে কারো কাছে কিছু চাইতে, আর না পারছে কাউকে কিছু বলতে।
অন্যদিকে মিরপুরে বসবাস করা এক তরুন ব্যবসায়ী বলছেন, আর কুলিয়ে উঠতে পারছেন না তিনি। তারও একই কথা কাউকে বলতেও পারছেন না, আবার চাইতেও পারছে না। কিছু বললেও সবাই মজার ছলে উড়িয়ে দিচ্ছে। এর কারণ অন্যান্য সময় সচ্ছলভাবে সমাজে তাদের চলাফেরা করা
করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে কিছু এলাকাতে কিছু সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী পরিচয় গোপন রেখে সহায়তা করছে। কিন্তু সেটা যেমন সব এলাকাতে নয়, আবার সেটা যথেষ্টও নয়। তাই বেশ বিপাকেই রয়েছেন মধ্যবিত্ত এবং নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো।